নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদের আগের দুদিন ঢাকা থেকে পোশাক শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রংপুরে এসেছেন বিআরটিসিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কয়েক শ বাসে। বর্তমানে এসব বাস মহাসড়কের দুপাশে সারি সারি রাখা হয়েছে। এতে দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে।
বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, বাসগুলো একসঙ্গে রাখার জায়গা নেই রংপুরে, মাঠেও রাখা যায় না। এ কারণ সড়কে রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে শ্রমিক নেতারা বলছেন, এসব বাস রাখার জন্য কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, ট্রাক টার্মিনাল, তাজহাটের বিআরটিসি ডিপোও রয়েছে। সেখানে রাখেননি তারা। এমনকি এসব বিষয় নিয়ে প্রশাসনও আমাদের কিছু বলেনি।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর মডার্ন মোড়, ক্যাডেট কলেজের সামনে, দর্শনা মোড়, আরকে রোড, মাহিগঞ্জ, তাজহাট, কামারপাড়া, টার্মিনাল রোডসহ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে আসা বিআরটিসি দোতলা এবং একতলা বাস ছাড়াও অন্য কোম্পানির বাসও সড়কের ওপর রাখা হয়েছে।
মহাসড়কের একটি বড় অংশের ওপর বিআরটিসি বাসগুলো রাখার কারণে অন্য যানবাহনের সড়কে চলার ঝুঁকি বেড়েছে। নিয়মিত চলাচল করা বাসগুলো ঠিকমতো টার্মিনালে ঢুকতে পারছে না।
সব বাস রিজার্ভ করে রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা, গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকরা ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে এসেছেন। ঈদ শেষে এই বাসেই ঢাকায় ফিরবেন তারা। ততদিন রাস্তার ওপরই থাকবে বাসগুলো।
রংপুর মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের দক্ষিণ জোনের পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন রুটে চলে এসব বাস। ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া পেয়ে রিজার্ভ এসেছে। কিছু বাস মূল সড়কের নিচে রেখেছে। এখনও কোনো সমস্যা হয়নি। চালকরা নেই। ঈদ শেষ হলে আবার শ্রমিকরা এই বাসে করে কর্মস্থলে ফিরবেন।’
নীলফামারী থেকে আসা বাসচালক আসাদ বলেন, ‘দর্শনা থেকে মডার্ন মোড় পর্যন্ত বিআরটিসি বাস আছে। এখানে এসে মোড় ঘুরতে সমস্যা হচ্ছে। মডার্ন মোড়ে সড়কের মধ্যে রাখছে বাসগুলো। কিছু একটা হইলে তো মানুষ আমাদের ধরবে। যত দোষ ডাইবোরদের (চালকদের)।
‘ওদেরকে তো কেউ কিছু কয় না। আমরা একটু ভুল করি, সঙ্গে সঙ্গে মামলা হবে।’
রংপুরের মডার্ন মোড়ে আশরাফুল ইসলাম নামে আরেক চালক বলেন, ‘যেভাবে গাড়িগুলো রাখছে একটা গাড়িকে ওভারটেক করলেই ওই গাড়ি লাগি যাইবে। তো গাড়িগুলো অন্য জাগাত রাখতে পারত। এসব তো আর বলা যাবে না।’
দর্শনা মোড় এলাকায় রাখা বিআরটিসি দোতলা বাসের চালক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা রিজার্ভে আইছি। পাঁচ-ছয় দিন থাকমু। রাইতোত অনেকে গাড়িতে থাকে, অনেকে আবার হোটেলে থাকে। এই কয়দিন কষ্ট হইব।’
বিআরটিসি দোতলা বাসের সহকারী আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমাদের দোতলা বাসে ৭০ জন পোশাক শ্রমিক আইছে। একজনের জন্য আড়াই হাজার টাকা করে ভাড়া ঠিক করে আইছি। বাসগুলো রাস্তাত থুইছি, এহন পর্যন্ত কেউ কিচ্ছু কয় নাই। অনেক বাস আবার উপজেলাগুলোতে গেছে।’
রংপুর বিআরটিসি বাস ডিপোর ডিজিএম গোলাম ফারুক বলেন, ‘২৬৫টি বিআরটিসি বাস রংপুরে এসেছে। আমরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের কাছে নিরপাত্তা চেয়েছি। তারা আমাদের শতভাগ নিরপত্তা দিয়েছেন, আমরা সেভাবে টেককেয়ার করছি। এ ছাড়া আমাদের নিজস্ব সিকিউরিটি রয়েছে।
‘এসব বাস ঢাকার বিভিন্ন রুটসহ দেশের বিভিন্ন সড়কে চলে। ঈদে শ্রমিকরা ভাড়ায় নিয়ে এসেছেন। ঈদের ছুটি শেষে ওই বাসেই শ্রমিকসহ যারা এসেছেন তারা যাবেন।’
গোলাম ফারুক বলেন, ‘বাসগুলো এর আগে একত্রে রাখা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে চাকাগুলো বসে যায়, এতে গাড়ির অনেক ক্ষতি হয়। এ কারণে মাঠে রাখার আপাতত সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে আমরা বিষয়টি বিবেচনা করব।’
রংপুর জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ বলেন, ‘কয়দিন আগেও প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের মিটিং হলো। তখনও এসব বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। সড়কের ওপর যে গাড়িগুলো রাখছে তাতে তো অন্য গাড়িগুলো স্ট্যান্ডে ঢুকতে পারছে না। যেখানে-সেখানে রাখছে। দুর্ঘটনা ঘটলে প্রশাসন দায় নেয় না, দোষ আমাদের হয়।’